জিতু আহমদ, ওসমানীনগর : বিয়ের আগেই কিশোরী সন্তান প্রসবকে কেন্দ্র করে সিলেটের ওসমানীনগরে সৃষ্টি হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা। পিতার স্বীকৃতি পেতে অভিযুক্ত যুবকের বাড়িতে দেড় মাসের শিশুসন্তান নিয়ে ১৫ ঘন্টা অনশন করেও কোন সুরাহা হয়নি। পুলিশ এসে অনশন থেকে মেয়ে ও শিশুসন্তানকে তার বাবার বাড়িতে ফিরিয়ে দিয়েছে।
আলোচিত এই ঘটনায় মামলা দায়ের করলেও ৪ মাসে অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
জানা গেছে, গত ২৩ জুলাই সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একটি ছেলে সন্তানের জন্ম দেন ধর্ষণ হওয়া কিশোরী। গত বৃহস্পতিবার স্ত্রী ও সন্তানের স্বীকৃতির দাবিতে ধর্ষকের বাড়িতে উঠেন কিশোরী। সকাল ৯ টা থেকে রাত ১২ পর্যন্ত ওই বাড়িতে অবস্থান নিলেও ঘরের কেউ দরজা না খোলায় আকুতি মিনতি করেও স্ত্রীর মর্যাদা না পেলে আত্মহত্যার হুমকিও দেন কিশোরী। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে অভিযুক্তের পরিবারের লোকজনদের সাথে কথা বলতে না পেরে কিশোরী সাথে আলোচনা করে গভীর রাতে শিশু সন্তানসহ তাকে বাবার বাড়িতে পৌছে দেয় পুলিশ।
শনিবার সকালে সরেজমিনে কিশোরীর বাবার বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে শিশু সন্তান নিয়ে একটি ঘরে বসে আছেন কিশোরী। বর্তমানে শিশু সন্তানসহ বাবার বাড়িতে থাকলেও সজু গ্রেপ্তার না হওয়া, প্রভাবশালীদের চাপ ও সামাজিক ভাবে হ্যায় প্রতিপন্ন হওয়ার কথা জানিয়ে ভুক্তভোগী কিশোরী বলেন, আমি আমার ছেলের পিতৃ পরিচয় চাই, আমার ছেলের বাবা 'সজু' আমি সজুকে আমার স্বামী হিসেবে পেতে চাই।
মামলা সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ২০ অক্টোবরে ভোরে কিশোরী পূজার ফুল তুলতে গিয়ে নিজ বুরুঙ্গা গ্রামের রাখাল দেবের ছেলে সজু দেব কর্তৃক ধর্ষণের শিকার হয়। পরবর্তীতে বিয়ের প্রতিশ্রুতিতে একাধিকবার ধর্ষণ করে সজু। একপর্যায়ে কিশোরীর শারিরীক পরিবর্তন হলে বিষয়টি জানাজানি হয়। বিষয়টি মিমাংসার জন্য সজুর পক্ষ হয়ে ইউপি সদস্য দীপংকর দেব নগদ টাকার বিনিময়ে অনাগত সন্তানের গর্ভপাতের জন্য চাঁপ প্রয়োগ করেন। এই বিষয়ে পঞ্চায়েতের লোকজন শালিশে বসলে নির্ধারিত দিনে ইউপি সদস্যসহ সজুর পরিবারের কেউ উপস্থিত হননি।
পরে ২মে থানায় সজুকে আসামি করে সংশ্লিষ্ট আইনে মামলা দায়ের করেন কিশোরীর পিতা। চার দিন পর রাতে মামলার বাদিকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে কথিত ডাক্তার বাসু দাশের চেম্বারে আটকে রাখা হয়। বাসু দাশসহ অভিযুক্ত সজুর ভাই রঞ্জু দেব, দিপংকর দেব ৫ লক্ষ টাকা প্রদানের মাধ্যমে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার ও কিশোরীর গর্ভপাত করাতে চাপ সৃষ্টি করেন। এই ঘটনা পুলিশকে জানালে পুলিশের পরামর্শক্রমে তিনদিন পর নিজের নিরাপত্তা চেয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি দায়ের করেন মামলার বাদি ও নির্যাতিতার পিতা।
অন্যদিকে, ঘটনার সুষ্ঠ বিচারের দাবিতে ১৯ জুন ওসমানীনগর উপজেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনে প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানিয়ে ছিলেন নির্যাতিতার পরিবার।
মামলার বাদি কিশোরীর পিতা জানান, ৫ লক্ষ টাকার বিনিময়ে গর্ভপাত করাতে নানা কৌশল অবলম্বন করে ব্যর্থ হয় সজু। পরে মামলা দায়ের করলেও পুলিশ আসামিকে গ্রেপ্তার করছে না। আমার মেয়ে অভিযুক্তের বাড়িতে অনশনে গেলে পুলিশ তাকে আমার বাড়িতে ফিরিয়ে দিয়ে গেছে।
ওসমানীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুদুল আমিন বলেন, শিশুসহ মেয়েটি বর্তমানে তার বাবার বাড়িতে রয়েছে। অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।