আলোচিত সিলেট ডেস্ক : সিলেটের পুলিশ সুপার হিসাবে দায়িত্ব নেয়ার পর শান্তি রক্ষায় অনেক অনেক ভালো ভালো উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন ফরিদ উদ্দিন পিপিএম (অ্যাডিশনাল ডিআইজি)।জটিল এবং ক্লুলেস অনেক মামলার যেমন সহজ সুরাহা হয়েছে তার দূরদৃষ্টি সম্পন্ন উদ্যোগ ও পদক্ষেপের ফলে,নিস্বপত্তি হয়েছে অনেক জট লেগে থাকা মামলারও তেমনি নানা সংকটের সময় মানবিক কাজের দ্বারাও তিনি দারুণ ভাবে প্রশংসিত হয়েছেন সিলেট বিভাগ জুড়ে।এক্ষেত্রেও প্রচুর উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন সিলেটের বিদায়ী এ পুলিশ সুপার। তার মানবিক কার্যক্রমে অনেকে যেমন আনন্দে ভাসছেন,তেমনি ভাবে আবেগাপ্লুত হয়ে কাঁদছেনও।তেমনটাই দেখা গেলো সিলেটে বিদায়ী এ পুলিশ সুপারকে দেয়া এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে।অনুষ্ঠানটির আয়োজক ছিল সিলেট জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ড ইউনিট।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তাদের বক্তব্যে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে। বিশেষ করে এসপি ফরিদ উদ্দিনের মানবিক কাজকর্মের স্মৃতিচারণ করেছেন প্রায় সব বক্তারা। এসব স্মৃতিচারণে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির সাবেক ইনচার্জ এসআই আকবর ভূঁইয়া গ্রেফতারের বিষয় থেকে শুরু করে করোনাকালে পুলিশের মানবিক দায়িত্ব পালন,করোনাকালনি সময়ে অসহায় মানুষকে সহায়তা করার সময় তাদেকে চেয়ারে বসিয়ে সম্মানার্থে খাদ্যসামগ্রি বিতরন করা,বিগত বন্যা ও সাম্প্রতিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে নির্ভরতার প্রতিক হয়ে দাঁড়ানো,প্রতিবন্ধী গৃহহীনকে ঘরে তুলে দেয়াসহ অন্ধ হাফেজকে নতুন ঘর তৈরি করে দেয়া-ইত্যাদিসহ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মাধ্যমে পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন অনেক মানুষের চোখে আনন্দের অশ্রু বইয়ে দিয়েছেন।
তবে সিলেটের মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য তিনি দারুন একটি কাজ করে বিভাগ জুড়ে অনন্য এক নজির সৃষ্টি করেছেন।এক সময়ের অবহেলিত এসব যোদ্ধাদের সম্মাণ জানাতে জেলার প্রতিটি থানায় একেকটি চেয়ার সংরক্ষণ করে রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়নও করেন।এখন সিলেটের প্রতিটি থানায় মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বিশেষ চেয়ার সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে।মুক্তিযোদ্ধারা তাদের কোন কাজে থানায় গেলে তারা সেই চেয়ারেই বসেন।এতে করে সিলেট বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় ব্যাপক সাঁড়া ফেলে দেন এসপি ফরিদ উদ্দিন। বিশেষ করে তার এমন সিদ্ধান্তে অনেক মুক্তিযোদ্ধার চোখে আনন্দের অশ্রুর বন্যা বয়ে গিয়েছিল।সেই আনন্দ তাদের মধ্যে এখনো আছে।সেটা বুঝা গেলো জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডের পক্ষ থেকে এসপি ফরিদ উদ্দিনকে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে।অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে কয়েকজন বক্তা কেঁদে ফেলেছিলেন।এসপি ফরিদ উদ্দিন তার হ্নদয় উজাড় করা ভালোবাসা দিয়ে জয় করে নিয়েছেন সিলেটবাসির হ্নদয় নিংড়ানো এ ভালোবাসা।
তারা তাদের বক্তব্যে বলেন,এসপি ফরিদ উদ্দিন সিলেট যোগদানের পর মুক্তিযোদ্ধাদেরকে বিভিন্ন ভাবে সম্মানিত করেছেন।আমাদের জন্য এমন ব্যবস্থা এসপি ফরিদ সাবের আগে আর কেউ কোন দিন করেননি।এসপি ফরিদ উদ্দিন সিলেট আসার আগেও কতো এসপি সিলেট জেলায় এসেছেন।কিন্তু এসপি ফরিদ উদ্দিন সিলেট আসার পর আমাদের মতো মুক্তিযোদ্ধাদেরকে নিয়ে যে উদ্যোগ নিয়েছেন তা আর কেউ নেননি।এসপি ফরিদ উদ্দিন বিজয়ের মাসে বিজয় দিবসের সময় মুক্তিযোদ্ধাদেরকে যে ভাবে বিশেষ সম্মানে ভূষিত করে সম্মান দিয়ে মূল্যায়ন করেছেন তা আমরা কখনোই ভুলতে পারবো না।আমরা যে মুক্তিযোদ্ধা তা তো ভুলেই গিয়েছিলাম। আমরা যে দেশকে স্বাধীন করার জন্য বঙ্গবন্ধুর ডাকে দেশের জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম এবং মুক্তিযুদ্ধের স্নৃতি বুকের মাঝে নিয়ে বেচেঁ আছি এবং এখনো অনেক মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধে গিয়ে পঙ্গুত্ত নিয়ে বেচেঁ আছেন কতো মুক্তিযোদ্ধা দূরারোগ্য রোগে আক্রান্ত ও দারিদ্রতার সাথে অসহায় ভাবে জীবন কাটাচ্ছেন তা অনেকের কাছেই অজানা।কিন্তু এসপি ফরিদ উদ্দিন আমাদেরকে যে ভাবে সম্মাণ দিয়েছেন, যেভাবে মূল্যায়ন করেছেন মুক্তিযোদ্ধাদের যে কোন সমস্যায় পাশে থেকেছেন তাতে সিলেটের মুক্তিযোদ্ধারা সম্মানিত ও গর্ববোধ করছেন-এতে কোন সন্দেহ নেই।অনুষ্ঠান শেষে বিদায়ি এসপি ফরিদ উদ্দিন একজন মুক্তিযোদ্ধাকে জড়িয়ে ধরতে গেলে তার চোখ এসময় ছলছল করতে থাকে এ সময় উপস্থিতি অনেক মুক্তিযোদ্ধা ও সমবেত অতিথিবৃন্দরাও আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
তাদের সবার শুভকামনা নিয়ে অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করেন এসপি ফরিদ উদ্দিন।সবার প্রশংসা আর ভালোবাসা নিয়ে তিনি আরও বহুদুর এগিয়ে যাবেন-এমন প্রত্যাশা ব্যাক্ত করেছেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সিলেট জেলা ইউনিটের কমান্ডার সুব্রত চক্রবর্তী জুয়েল,শিল্পী আংশুমান দত্ত অঞ্জন,গোয়াইনঘাট শাখার কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মো.আব্দুল হক, কানাইঘাট শাখার কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মো.নজমুল হক,সদরের সহকারী কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা রইছ আলী,সিলেট মহানগর শাখার ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালিক,সিলেট জেলা ইউনিটের ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আক্রাম আলী,বীর মুক্তিযোদ্ধা পান্না লাল রায়,৭১ এর ঘাতক দালার নির্মুল কমিটি সিলেট মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট সবুজ, সন্তান কমান্ডের আহবায়ক মনোজ কপালী মিন্টু,যুগ্ম আহবায়ক জাকারিয়া চৌধুরী জাকি,সদস্য সচিব এম এইচ পাভেজ বিশ্বাস,সদস্য ডিপজল পাত্র প্রমুখ।
