আলোচিত সিলেট ডেস্ক : সুখবর, সুখবর, বিয়ানীবাজারবাসীর জন্য সুখবর। মাথাব্যথা, কোমর ব্যথা, কাশি, হার্ট ও যৌন বিশেষজ্ঞ, ডাক্তার সাহেব প্রতি মঙ্গল, বুধ, বৃহস্পতি ও শুক্রবার নিয়মিত রোগী দেখবেন….।’ ‘মেলা মেলা মেলা। মোবাইল সিমের মেলা।’ ‘বিশেষ মূল্য অফারে বিক্রি হচ্ছে মোবাইল সিম।’ ‘আগামীকাল বিয়ানীবাজারে একটি বিরাট গরু জবাই করা হবে।’ প্রতি কেজি মাংসের দাম…..। ’ ‘আগামীকাল বিয়ানীবাজারে একটি বিরাট বাঘ মাছ বিক্রি করা হবে।’ প্রতি কেজির দাম…..। ’ ‘মূল্যহ্রাস মূল্যহ্রাস মূল্যহ্রাস। বিরাট মূল্যহ্রাস। এই সুযোগ আগামী…।’
বিয়ানীবাজার পৌরশহরে এই ধরনের মাইকিং প্রচারণা হয়ে উঠেছে নিত্য যন্ত্রণা। বিষয়টি এখন চলে গেছে পৌরবাসীর কাছে অসহনীয় পর্যায়ে। সিএনজি অটোরিকশা কিংবা রিকশায় ও ইজিবাইকে কখনো একটি মাইক বেঁধে আবার কখনো দু’টি মাইক বেঁধে উচ্চ শব্দে দিনে-রাতে চলে এ ধরনের প্রচারণা। দীর্ঘ সময় ধরে এভাবে মাইকিং করতে এখন আর দরকার পড়ে না ঘোষকের। ঘোষণাটি একবার রেকর্ড করে মোবাইলের মেমোরি কার্ড কিংবা পেনড্রাইভে নিয়ে রিকশায় অথবা ইজিবাইকে মাইক বেঁধে চলতে থাকে দিনভর বিরতিহীন ঘোষণা।
এরকম শব্দ দূষণ দিন দিন যেন এক নিরব ঘাতকে পরিণত হয়েছে। শব্দ দূষণের বিরুদ্ধে আইন থাকলেও প্রয়োগ নেই বলে এমন বিষয়ে বিয়ানীবাজারে দীর্ঘদিন থেকে আলোচনা সমালোচনার ঝড় বইছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। তবে এবার উদ্দ্যোগ নিয়েছে বিয়ানীবাজার পৌরসভা। মাত্রাত্রিকভাবে শব্দ দূষণ বেড়ে যাওয়ায় শব্দ দূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা অনুসরণ করে অনুমতি ছাড়া উচ্চ স্বরে যত্রতত্র মাইক/সাউন্ড সিস্টেম বাজানো বন্ধে উদ্যোগ নিচ্ছে বর্তমান পরিষদ। ইতোমধ্যে পরিষদের এক জরুরি সভায় এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে বলে একাধিক সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
পরিষদের সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহ থেকে জানা গেছে, শব্দ দূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা ২০০৬ যথাযথভাবে প্রতিপালন করে ব্যবসায়ীদেরকে পৌরসভার আওতাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ব্যবসা পরিচালনা করতে হবে এবং বিধিমালা অনুসারে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তার অনুমোদন ব্যতিত মাইক/সাউন্ড সিস্টেম ভাড়া প্রদান ও ব্যবসা পরিচালনা থেকে বিরত থাকতে হবে। একইসাথে মাইক/সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহারকারীদেরকেও একইভাবে অনুমতি গ্রহণ সাপেক্ষে মাইকিং প্রচারণা চালাতে হবে। তবে সরকারি প্রজ্ঞাপন, ধর্মীয় কিংবা শোকের প্রচারণা ব্যতিত অন্য প্রচারনার ক্ষেত্রে পৌরসভা কর্তৃপক্ষের অনুমতির সাথে সাথে ফিও পরিশোধ করতে হবে।
শব্দ দূষণ রোধে মাইক ও সাউন্ড সিস্টেম নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ গ্রহনের বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন বিয়ানীবাজার পৌরসভার মেয়র ফারুকুল হক। তিনি বলেন, বিধিমালা অনুযায়ী আবাসিক ও বানিজ্যিক এলাকায় সময়সূচি নির্ধারনের পাশাপাশি শব্দ ব্যবহারের মাত্রা বেঁধে দেয়া হবে। খেলাধুলা, কনসার্ট ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, রাজনৈতিক বা অন্য কোন ধরনের সভা, মেলা, বিজ্ঞাপন, যাত্রাগান ইত্যাদির ক্ষেত্রে শব্দের মাত্রা অতিক্রম করে- এমন যন্ত্র ব্যাবহার করা যাবে না। তবে তার জন্য কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে।
মেয়র ফারুকুল হক বলেন, নাগরিক জীবনে স্বাস্থ্যঝুঁকির একটি অন্যতম কারণ শব্দ দূষণ। রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ, গান-বাজনার কনসার্ট, বিজ্ঞাপন ও ব্যবসায়িক প্রচারণা, নির্মাণকাজ, যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি ইত্যাদি কারণে এ সমস্যা আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এতে একদিকে জনগণ যেমন শ্রবণ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলার ঝুঁকিতে রয়েছে, সেই সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। শব্দ দূষণ দুশ্চিন্তা, অবসাদ, উদ্বিগ্নতা, নিদ্রাহীনতা ইত্যাদি বাড়িয়ে দেয়, যা দীর্ঘমেয়াদে শারীরিক বিভিন্ন সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। শব্দ দূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০০৬ এ আবাসিক, নীরব, মিশ্র, শিল্প ও বাণিজ্যিক মোট পাঁচ ধরনের এলাকা এবং সেখানে শব্দের মাত্রা নির্ধারণ করে দেয়া থাকলেও বাস্তবে সব স্থানেই শব্দের মাত্রা মাত্রাতিরিক্ত।
তিনি আরও বলেন, আমি ও আমার কাউন্সিলরদের পর্যবেক্ষন এবং পৌরসভার সচেতন নাগরিক সমাজের বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে পৌরবাসীর স্বাস্থ্য সুরক্ষার লক্ষ্যে শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণে আমরা কাজ করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। ইতোমধ্যে আমাদের পরিষদের সবধনের প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। দিন দুয়েকের মধ্যে বিষয়টি পৌরবাসীকে জানিয়ে দেয়া হবে। সরকারি প্রজ্ঞাপন, ধর্মীয় কিংবা শোকের প্রচারণা ব্যতিত অন্য প্রচারনার ক্ষেত্রে পৌরসভা কর্তৃপক্ষের অনুমতির সাথে সাথে ফিও পরিশোধ করতে হবে।
শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করাই আমাদের উদ্দেশ্য উল্লেখ্য করে মেয়র ফারুকুল হক পৌরবাসীর সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি বিয়ানীবাজার পৌরসভা পরিষদের পক্ষ থেকে এ ধরণের জনসচেতনতামূলক কর্মসূচি পালন অব্যাহত থাকবে বলেও জানান।
