নিজস্ব প্রতিবেদক : একাধিক অনিয়মের অভিযোগে সিলেটের গোলাপগঞ্জের রনকেলী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ আবু জাফর মোহাম্মদ ফয়সলকে শোকজ করেছে বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটি। মঙ্গলবার বিদ্যালয়ের গভর্নিং বডির সভাপতি আয়লাফ আহমদ চৌধুরী স্বাক্ষরিত শোকজ নোটিশে ৮টি কারণ জানিয়ে জবাব দিতে সাত দিনের সময় দেওয়া হয়েছে।
গভর্নিং বডি সূত্রে জানা যায়, অধ্যক্ষ আবু জাফর মোহাম্মদ ফয়সাল সহকারী অধ্যক্ষ নিয়োগ কার্যক্রমের পুনঃ নিরীক্ষণ ও তথ্য যাচাইয়ে জন্য সিসিটিভি পর্যবেক্ষণে অসহযোগিতা করেছেন। একই সাথে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে প্রধানমন্ত্রী ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কিত প্রশ্নপত্র প্রণয়নে অনীহা, সিলেটের বাহিরের জেলার হিন্দু প্রার্থী নিয়োগ না দেওয়ার জন্য সভাপতি ও নিয়োগ বোর্ডের অন্যান্য সদস্য সহ সহকর্মীদের অনুরোধ করা, ডিজি প্রতিনিধি কর্তৃক মোবাইল ফোন হতে প্রশ্ন প্রণয়নে মৌন সম্মতি জ্ঞাপন, সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগের ব্যাপারে নিজের পছন্দের ব্যক্তিকে (শাহ নেওয়াজ) নিয়োগ দিতে হবে অন্যথায় নিয়োগ বাতিল করতে হবে বলে মত প্রদান, নিয়োগ কমিটি গঠনে অপকৌশল অবলম্বন, নিয়োগ পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নে পক্ষপাতিত্ব করাসহ কমিটিকে অবগত না করে বিদ্যালয়ের দুটি গাছ কেটে বিক্রি করার অভিযোগ করে শোকজ করা হয়।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের গভর্নিং বডির সভাপতি আয়লাফ আহমদ চৌধুরী জানান, গত ৯ নভেম্বর বিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যক্ষ নিয়োগ পরীক্ষা ছিল। এই পরীক্ষায় ১৯ জন প্রার্থীর মধ্যে ১৬ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন।
অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে সিলেটের স্থায়ী বাসিন্দা ছিলেন দুইজন। এদের মধ্যে একজন হিন্দু এবং আরেকজন মুসলিম। এসময় তিনিসহ কমিটির অন্য সদস্যরা বলেন, ‘নিয়োগ পরীক্ষায় সিলেটি প্রার্থী ও মুসলিম কাউকে নিতে হবে। এই যুক্তি দেখিয়ে তিনি তাঁর পছন্দের প্রার্থী শাহ নেওয়াজ নামের একজনকে নিয়োগ দেওয়ার পাঁয়তারা করেন। নিয়োগ পরীক্ষা শুরুর পূর্বে প্রশ্ন প্রণয়নের সময় ডিজি প্রতিনিধি মোবাইল ফোন দেখে প্রশ্ন তৈরি করেছিলেন নিয়োগ কমিটির সদস্য। কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম এর প্রতিবাদ করে বলেছিলেন বই থেকে প্রশ্ন করার জন্য। কিন্তু সেটা আমলে নেননি ডিজি প্রতিনিধি এবং বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষও এর মৌন সম্মতি দিয়েছেন।
তিনি আরো বলেন, নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি হিসেবে আমি প্রস্তাব করি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ সম্পর্কে ৭০ নম্বরের প্রশ্নের মধ্যে ১০ নম্বরের প্রশ্ন রাখার জন্য। কিন্তু সেটা আমলে নেননি সচিব আবু জাফর মোহাম্মদ ফয়সাল ও ডিজি প্রতিনিধি। এরপর সবার জোর দাবিতে ৫ নম্বরের প্রশ্ন রাখা হয়। বাকি ৬৫ নম্বরের প্রশ্ন দেন ডিজি প্রতিনিধি ও প্রধান শিক্ষক। নিয়োগ কমিটির অপর আরেক সদস্য প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কিত প্রশ্ন রাখার প্রস্তাব করলে এর বিধান নেই বলেন জানান ডিজি প্রতিনিধি। এসময় অধ্যক্ষও তাতে সম্মতি জানান। লিখিত পরীক্ষায় অধ্যক্ষের পূর্ব নির্ধারিত প্রার্থী শাহ নেওয়াজকে লিখিত পরীক্ষার প্রথম দেখানো হলে নিয়োগ কমিটি পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এবং খাতা পুনঃ মূল্যায়নের দাবি জানালে ডিজি প্রতিনিধি ক্ষিপ্ত হন এবং অধ্যক্ষকে সাথে নিয়ে নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত রেখে বাসায় চলে যান। সেইসাথে তিনি লাঞ্ছিত হয়েছেন বলে অভিযোগ করেন। এসব বিষয়ের সত্যতার জন্য কমিটির সদস্যবৃন্দ বিদ্যালয়ের সিসিটিভি ফুটেজ দেখাতে বললে অধ্যক্ষ তা দেখাতে অনীহা প্রকাশ করেন।
আয়লাফ আহমদ চৌধুরী আরো বলেন, শুধু তাই নয় বিদ্যালয়ের গভর্নিং বডির কাউকে অবগত না করে নিজের খেয়াল খুশি মতো অধ্যক্ষ বিদ্যালয়ের দুটি কাছ বিক্রি করে দিয়েছে। এসব বিষয়ে আমরা লিখিত নোটিশের মাধ্যমে অধ্যক্ষের কাছে জবাব চেয়েছি। লিখিত জবাব না দিলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ আবু জাফর মোহাম্মদ ফয়সাল প্রথমে অফিসে যাওয়ার কথা বলেন। এরপর পুনরায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে এখন কথা বলতে চাইনা। যেহেতু বিষয়টি একটা পর্যায়ে গেছে।
এছাড়াও নোটিশের জবাব না দেওয়া পর্যন্ত শোকজের বিষয়ে কিছু বলতে চান না বলে জানান অধ্যক্ষ। সেই সাথে কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ না করেও এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি নন তিনি।
