ফাহিম আহমদ : “বাদশা বাবর কাঁদিয়া ফিরিছে, নিদ নাহি চোখে তাঁর/ পুত্র তাঁহার হুমায়ুন বুঝি বাঁচে না এবার আর!/ চারিধারে তার ঘনায়ে আসিছে মরণ-অন্ধকার।/...মরিল বাবর– না, না ভুল কথা, মৃত্যু কে তারে কয়?/ মরিয়া বাবর অমর হয়েছে, নাহি তার কোন ক্ষয়,/ পিতৃস্নেহের কাছে হইয়াছে মরণের পরাজয়!”
‘জীবন বিনিময়’ কবিতায় গোলাম মোস্তফা তুলে ধরেছেন সন্তানের প্রতি বাবার ভালোবাসার হৃদয়স্পর্শী চিত্র। যেখানে সন্তানের রোগমুক্তির আশায় নিজের জীবন উৎসর্গ করেন বাবা।
মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা সম্রাট বাবর সন্তানের প্রতি ভালোবাসার এক অনন্য উদাহরণ হয়ে আছেন। একজন বাবাকে সন্তানের ভালোর জন্য জীবনের অনেক কিছু ত্যাগ করতে হয়। তাই বাবা দিবসে সন্তানদের সামনে সুযোগ আসে বাবাকে ভালোবাসা আর ধন্যবাদ জানানোর।
আজ বিশ্ব বাবা দিবস। বাবাকে নিয়ে যতই লিখব কম হয়ে যাবে। তারপর বাবাকে নিয়ে দু'একটি স্মৃতি লিখতে চাই।
১/ আমি যখন খুব ছোট। ক্লাস ১/২ তে পড়তাম। তখন বন্যা হয়েছিল। বন্যার পানি আমাদের বাড়ির উঠোনে চলে এসেছিল৷ সকাল বেলা স্কুলের সময় হয়েছে। আমার বাবা আমাকে নিজের কাঁধে করে, নিজে পানিতে ভিজে আমাকে শুকনোতে নিয়ে গেছেন। কারণ তিনি তো বাবা।
২/ আমি প্রথমে ভর্তি হয়েছিলাম আমাদের গ্রামের মাদ্রাসায়। আমার মনে হয়, তখন ক্লাস থ্রি তে উঠে গিয়েছিলাম। তবে কিছুই পাড়তাম না। এরপর আমাকে ভাল শিক্ষা গ্রহণ করার জন্য আমার বাবা একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ভর্তি করান। প্রতিদিন সকালে স্কুলে নিয়ে যেতেন। যখন টিফিন টাইম হতো তখন তিনি সিঙারা এই সেই কিনে দিতেন। একদিন টিফিন টাইম হয়েছে বাবাকে পাচ্ছিনা, তখন খুবই কান্না করছিলাম। পরবর্তীতে ছুটি হওয়ার পর বাবা স্কুল থেকে নিয়ে এসেছিলেন।
৩/ আমার এখনো মনে হয়, আমি ছোট বেলা পাঞ্জাবি পড়তে পছন্দ করতাম না। মাদ্রাসায় পড়ার সুবাধে বাবাকে একটি পাঞ্জাবি কিনে এনেছিলেন আমার জন্য। আমি সেই পাঞ্জাবি না পড়ায় তিনি সেটা ছিঁড়ে ফেলে দেন।
৪/ যখন ঈদ আসতো, ঈদের ৩/৪ দিন আগে আমার বাবা আমাকে হাতে ধরে মার্কেটে নিয়ে যেতেন। নিজের পছন্দানুযায়ী কাপড় কিনতাম। বাবাকে দেখতাম তিনি অনেক সময় নিজের জন্য কাপড় না কিনে বাড়িতে চলে আসতেন৷
৫/ এখন অনেক বড় হয়ে গেছি। তারপর যখন রাতে বাড়িতে আসতে লেইট হয় তখন বাবা ফোন দেওয়া শুরু করে দেন। বার বার বলেন, এমন কোন নিউজ করব না, যে নিউজে আমার ক্ষতি হয়।
এ স্মৃতি গুলো তো সামান্য। দীর্ঘ ২৫ বছরে বাবার সাথে কাটানো কত শত স্মৃতি রয়েছে যা লিখতে লিখতে শেষ হবে না। পরিশেষে সকলের কাছে আমার বাবার নেক হায়াত ও সুস্থতা কামনা। আর যাদের বাবা নেই তাদের বাবাকে যেন আল্লাহ জান্নাত দান করেন।