আলোচিত সিলেট ডেস্ক : সিলেটের গোলাপগঞ্জের পাসপোর্ট আবেদনকারি মাইদুল হক। তার আবেদন নং- ৪১৬৯৫৬। তাকে ডিএসবির সাবইন্সপেক্টার মুতলিব ফোন দিয়ে বললেন। আপনার নাম মাইদুল হক, আপনার বাড়ি গোলাপগঞ্জের ভাদেশ্বর এলাকায়। আমি ডিএসবির সাবইন্সপেক্টার মুতলিব বলছি। পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেছেন। কোন ট্রাভেল্সে পাসপোট করতে দিয়েছেন আমার নাম্বার দিয়ে বলেন যোগাযোগ করার জন্য। যোগাযোগ করতে দেরি হওয়ায় দুদিনে একাধিকবার পাসপোট আবেদনকারিকে ফোন দিয়ে বিরক্ত করেছেন। অবশ্য পরে সিলেটের এক উার্ধ্বতন কর্মকর্তার হস্তক্ষেপে টাকা ছাড়াই রিপোর্ট চলে যায় পাসপোট অফিসে।
অপর পাসপোর্ট আবেদনকারি মিনহাজ আহমদ মাহি আবেদন নং-৪২২৩৫৬। অনুরূপ ভাবে ফোন দিয়ে বলেন, আপনি কোন ট্রাভেল্স থেকে পাসপোর্ট করেছেন আমার নাম্বারে যোগাযোগ করতে বলেন। অপর প্রান্ত থেকে আবেদনকারি বললেন, আমি নিজে নিজে পাসপোর্টের আবেদন করেছি। ডিএসবির এসআই মুতলিব বললেন ঠিক আছে বাড়িতে থাকবেন আমি আসবো।
কথা বললেন, পাসপোর্ট আবেদনকারি মাহির সাথে সকালে। বিকেলে পাসপোর্ট আবেদনকারির বাড়ির কাছে গিয়ে ফোন দিয়ে তাকে বাড়ি থেকে বের করে বললেন আপনার বাড়ি কোথায়, রায়গড় স্যার। না ওটা রায়গড় গ্রাম নয়। ওই এলাকা হলো দত্তরাইল। ঠিক আছে খরচপাতি বাবদ ১৫০০ টাকা দাও। পাসপোর্ট কোন ট্রাভেল্স থেকে করেছো। স্যার আমি নিজে করেছি। তুমি ছাত্র মানুষ কিভাবে নিজে নিজে করতে পারলা। স্যার আমার মামা একজন সাংবাদিক তিনি আবেদন করে দিয়েছেন আমি পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে জমা দিয়েছি। কে সাংবাদিক। অহ উনাকেতো চিনি ঠিক আছে তুমি ৫০০টাকা দিয়ে দাও আর উনাকে বলবানা আমি এসেছি।
পাসপোর্ট আবেদনকারির নাম্বার ৪২২৩৫৫। জেলা পুলিশের আরো এক সহকারি সাবইন্সপেক্টার নজরুল ০১৭১২৭৪৫৪১৪ মোবাইল নাম্বারে ফোনে বললেন আরে ভাই আপনি পাসপোট জরুরী ফাইলের তদন্তে ৭২০টাকা বিকাশ করলেন কিভাবে। আপনি জানেন না জরুরী ফাইলের তদন্তে কত টাকা দেয়া লাগে। ৪/৫ মাস আগেও আপনি জরুরি ফাইলে টাকা কম দিয়েছেন আপনার নাম্বার সেইব করা আছে। এভাবে সিলেট জেলা পুলিশের আওতাধীন এসবিডিএসবির তদন্তকারি কর্মকর্তারা হুমকি দিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে পাসপোর্ট তদন্ত রিপোর্ট প্রদান করতে ফিল্মী স্টাইলে কথা বলে উৎকোচ আদায় করছেন। যেন বিষয়টি দেখার কেউ নেই।
একদিকে সারা দেশে নির্বাচন নিয়ে চলছে অস্তিরতা অন্যদিকে অরাজকতা সৃষ্টি করে উৎকোচ আদায় করছেন সিলেট জেলা পুলিশের এসবিডিএসবি পুলিশ অফিসার মুতলিব ও সিলেট এসবিডিএসবির এএসআই নজরুল ইসলামসহ জেলা পুলিশের আওতাধীন ডিএসবির অনেক পুলিশ কর্মকর্তারা। তাদের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ থাকলেও রহস্যজনক কারণে কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় তারা বেপরোয়া। ডিএসবির এসব কর্মকর্তারা কাউকে তোয়াক্কা করেন না।
পাসপোর্ট আবেদনের ভেরিফেকশনের নামে সিলেটের গোলাপগঞ্জে পুলিশের তদন্ত রিপোর্টের নামে গ্রাহকদের চরমভাবে আর্থিক হয়রানি করছে এসবিডিএসবি পুলিশ। তাদের রোষানলে প্রতিনিয়ত পড়ছেন বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পাসপোর্টের তদন্ত রিপোর্ট ও পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রার্থীরা।
এছাড়াও কনস্টেবল দিয়ে পাসপোর্ট ও পুলিশ ভেরিফিকেশন রিপোর্ট তদন্ত করানোর কারণে গ্রাহকরা নানাভাবে নাজেহাল হচ্ছেন বলেও অভিযোগ ভূক্তভোগীদের। ভুক্তভোগীদের অভিযোগে জানা যায়,
এসবিডিএসবির সাবইন্সপেক্টর মুতলিবের রোষানলে ভোগান্তির পাশাপাশি নাজেহাল করছেন পাসপোর্ট প্রাপ্তিদেরকে। বর্তমান ডিএসবির কার্যক্রম অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে নিরদ্বিধায় বড়কর্তাদের দোহাই দিয়ে উৎকোচ আদায় করছেন। এ জেলার ও বিভিন্ন থানার আওতাধীণ এসবিডিএসবির সাবইন্সপেক্টার মুতালিবসহ সকলেই পুরো জেলা ও উপজেলায় ডিএসবির ধান্ধাবাজি নিয়ে চলছে আলোচনা সমালোচনা।
এলাকার একাধিক ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একটি পাসপোর্ট কিংবা পুলিশ প্রতিবেদনের জন্য প্রথম দফায় নিজ নিজ উপজেলায় কর্মরত পাসপোর্ট তদন্তকারী ও পুলিশ ক্লিয়ারেন্স প্রদানকারী কর্মকর্তা কনস্টেবলরা গ্রাহক/রিপোর্ট প্রার্থীদের কাছ থেকে ন্যূনতম ৩ হাজার থেকে শুরু করে ১০-১২ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করার অভিযোগ উঠেছে। যদি কেউ টাকা দিতে একটু গড়িমসি করে তাহলে তার সঙ্গে অশোভন আচরণ করাসহ নানা ভাবে ভয়ভীতি দেখানো হয়।
পাসাপোর্ট অধিদপ্তরের এক পরিপত্রের আলোকে জানা যায়, যে কোন পাসপোর্ট প্রাপ্তিরা ১৮ বছরের উর্ধ্বে হলে তার জাতীয় পরিচয় পত্র (এনআইডি) দিয়ে আর ১৮ বছরের নীচে হলে জন্ম সনদ দিয়ে নাম, পিতা-মাতার নাম, জন্ম তারিখ ও ঠিকানা যেভাবে মুদ্রিত রয়েছে সে আলোকেই পাসপোর্ট প্রাপ্তির জন্য আবেদন করতে পারবে। এতে পিতা-মাতার আইডি কার্ড প্রযোজ্য নয়। কিন্তু গোলাপগঞ্জের এসবিডিএসবির কর্মকর্তারা নিজ নামের এনআইডির তথ্যকে তোয়াক্কা না করে পিতা-মাতার আইডি প্রদর্শণ করার জন্য চাপ দেন। আবার কেউ কেউ জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য সংগ্রহ করে পিতা-মাতার আইডি কার্ডে নামের বানান ভূল আছে, ঠিকানায় বানান ভূল রয়েছে পাসপোর্ট প্রাপ্তির রিপোর্ট দেয়া যাবে না বলে কৌশলে বড় অংকের উৎকোচ আদায় করেন। আর সেই অনৈতিক উৎকোচ আদায় করতে নানা কৌশল অবলম্বন করেন এসআই মোতলিব ও সিলেট এসবিডিএসবি অফিসের এএসআই নজরুল, গোলাপগঞ্জ থানার আওতাধীন ডিএসবির কনস্টেবল মিজান।
ওই কনস্টেবল মিজান তিনি দীর্ঘদিন ধরে গোলাপগঞ্জে কর্মরত থাকায় ও এলপিআরে যাওয়ার সময় হওয়ায় তিনি আর চাকুরি নিয়ে ভাবেন না। ফলে নিরদ্বিধায় উৎকোচ আদায় করেন। আর সাব ইন্সপেক্টার মুতলিব কখনও হয়ে যায় বয়স নির্ধারণের বিশেষজ্ঞ। আবার কখনও হয়ে যান চেয়ারম্যান কিংবা মেয়রের জাতীয় সনদ বা জন্ম নিবন্ধন বিশেষজ্ঞ। তারা এনআইডি কার্ড কিংবা জন্ম সনদে সঠিক জন্ম তারিখ ও পিতা-মাতার নামের বানানের ভূলটাও নিয়ে সৃষ্টি করে নানা ঝামেলা। কখনও বলে বয়স কমিয়ে দিয়েছ, পিতা-মাতার আইডি কার্ডে বানান ভূল রয়েছে রিপোর্ট পক্ষে দেয়া যাবে না বিধায় পাসপোর্ট হবে না। তবে সব কথার শেষ কথা হল ‘আপস’ করতে হবে। কাগজপত্র যাই থাকুক না কেন। কয় টাকা দেবেন বলেন?
অনুসন্ধানে জানা যায়, সিলেট পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসের পরিচালক মহের উদ্দিন শেখ আসার পর থেকে সিলেট আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের দুর্নীতি ও হয়রানি কমে গেছে। এখন পাসপোর্ট অফিসে কোন দুর্নীতি নেই বললেই চলে পাশাপাশি অত্যন্ত মনোরম পরিবেশে পাসপোর্ট প্রাপ্তিরা সেবা পাচ্ছেন। তবে এখন পাসপোর্ট আবেদনের ভেরিফেকশনের গ্যারা কলে পড়ে হয়রাণিসহ আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে সাধারণ মানুষজন। ডিএসবির প্রতি রিপোর্টে দিতে হয় ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত উৎকোচ। আর পাসপোর্টের আবেদনে যদি পেয়ে যান অন্যরকম সুগন্ধি তাহলে তো আনন্দের আর শেষ নেই কয়েক লাখ টাকা দিয়ে রিপোর্ট ছাড়াতে হবে নতুবা মামলাসহ নানা হয়রানি সম্মুখীন হতে হবে।
এদিকে ডিএসবির পাসপোর্ট তদন্ত ও পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের নামে বেপরোয়া বাণিজ্যের ব্যাপারে গোলাপগঞ্জ থানার দায়িত্বরত পাসপোর্ট তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মুতলিব ও কনস্টেবল মিজান জানান, পাসপোর্ট তদন্তের জন্য যে টাকা আমরা গ্রাহকদের কাছ থেকে আদায় করি ওই টাকার আংশিক ভাগ আমরা পাই। সিংহভাগ টাকা উর্ধ্বতন কর্মকর্তার টেবিলে যায়। এমন বক্তব্য শুনে মুতলিবের বরাত দিয়ে ডিআই ওয়ানের সাথে যোগাযোগ করে উক্ত বিষয় জানতে চাইলে তারা জানান, কোন সমস্যা নেই। কারণ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারাতো টাকা ছাড়া পাসপোর্ট তদন্ত রিপোর্টে স্বাক্ষরই করেন না এমনকি পাসপোটের তদনেÍর ফাইল আনতে হলে ক্রয় করে আনতে হয়।
সাব ইন্সপেক্টার মুতলিব, সহকারি সাবইন্সপেক্টার নজরুল ও কনস্টেবল মিজানের মতো যারা মাঠে-ময়দানে পাসপোর্ট কিংবা পুলিশ ক্লিয়ারেন্স নিয়ে কাজ করে তাদের অধিকাংশের বক্তব্যই একই রকম। কনস্টেবল মিজান ও সাব ইন্সপেক্টার মুতলিবের বক্তব্যের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এতে করে তারা উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরকেও তোয়াক্কা করেন না।
উপজেলার গোলাপগঞ্জ ভাদেশ্বর এলাকার জালাল আহমদ রায়গড় গ্রামের মিনহাজ আহমদ মাহি অভিযোগ করেন, কাগজপত্র সব কিছু ঠিক থাকলেও ডিএসবি পুলিশ অফিসার মুতলিব ও এএসআই নজরুল ও কনস্টেবল মিজানকে বড় অংকের উৎকেচ প্রদান করতে হয় পুলিশ তদন্ত রিপোর্টে। তাদের লাগাম চেপে ধরা সম্ভব হয় না কারণ বড়কর্তাদের ম্যানেজ করেই চলে লাখ লাখ টাকার রমরমা বাণিজ্য।
জরুরিভিত্তিতে (৭২ ঘণ্টা) পাসপোর্ট আবেদনকারীরও এ হয়রানি থেকে পরিত্রাণ নেই। এক্ষেত্রে পুলিশের রিপোর্ট ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দেয়ার কথা বলা থাকলেও সে রিপোর্ট রহস্যজনক কারণে কচ্ছপ গতিতে প্রেরণ করা হয়। পাসপোর্ট করতে গিয়ে এসব ঘুষ বাণিজ্যের প্রতিকার চেয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
এবিষয়ে ডিএসবির দায়িত্বরত ডিআইওয়ানের সাথে তার আতাধীন পাসপোর্ট আবেদনের তদন্ত কর্মকর্তা ও কনস্টেবলদের অপেন উৎকোচ আদায়ের বিষয়ে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, টাকা আদায়ের বিষয়ে তার জানা নেই। খোঁজখবর ও তদন্তসাপেক্ষে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সূত্র : সকালের দিগন্ত
