আলোচিত সিলেট ডেস্ক : মোছা. জান্নাত। বয়স মাত্র ১৩ বছর। দরিদ্র ঘরে জন্ম, তাই নিয়তিকে মেনে নিয়ে মাসিক ১৫ শ টাকা বেতনে গৃহকর্মী হিসেবে ঠাই হয় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নার্স শাহনাজ আক্তার সাবিহার (৩৮) বাসায়। কিন্তু শাহনাজের ঘরে যাওয়ার পর থেকে জান্নাত দেখেন চোখে সর্ষেফুল। কারণ- তার উপর নেমে আসে মধ্যযুগীয় বর্বর নির্যাতন। ভাত বেশি খাওয়ার অপবাদে শাহনাজ, তার স্বামী পলাশ মিয়া (৩৫) ও বোন রেহেনা আক্তার রুমি (২৪) জান্নাতকে প্রায় প্রতিদিনই বেধড়ক মারধর করেন বলে অভিযোগ উঠে।
এ বিষয়ে জান্নাতের বাবা মো. জাকির হোসেন খান কোতোয়ালি থানায় সোমবার (৩ জুলাই) মামলা দায়ের করেছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিলেট কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আলী মাহমুদ।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, জান্নাতের বাবা মো. জাকির হোসেন খানের বাড়ি ও ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নার্স শাহনাজ আক্তার সাবিহার বাবার বাড়ি সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলং এলাকার চৈলাখেল গ্রামে। সেই সুবাদে জাকিরের মেয়ে জান্নাতকে শাহনাজ তার বাসায় গত বছরের জানুয়ারি থেকে মাসিক ১৫ শ টাকা বেতনে গৃহকর্মী হিসেবে কাজে নেন। কিন্তু ওই বাসায় যাওয়ার পর থেকেই জান্নাতের উপর নেমে আসে বর্বর নির্যাতন। ভাত বেশি খাওয়াসহ বিভিন্ন অপবাদ-অজুহাতে জান্নাতকে শাহনাজ ও তার স্বামী এবং বোন বেধড়ক মারধর করেন। এমনকি রান্নার কাজে ব্যবহৃত স্টিলের খুন্তি আগুনে গরম করে জান্নাতের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছ্যাঁকা দিয়ে নির্যাতন করতেন তারা। কিন্তু এসব বিষয় পরিবারকে জানালে জান্নাতকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিতেন শাহনাজরা। তাই এতদিন জান্নাত মুখ খুলেনি।
এভাবে নিমর্ম নির্যাতনের শিকার হয়ে শাহনাজের ঘরে দিন কাটছিলো জান্নাতের। নির্যাতনের ধারাবাহিকতায় দীর্ঘ দেড় বছরে একবারও জান্নাতকে বাবার বাড়ি যেতে দেননি শাহনাজ। এবার ঈদুল আযহায় শাহনাজ তার বাবার বাড়ি বেড়াতে যান। সঙ্গে যায় জান্নাত। সে সেখানে গিয়ে এক ফাঁকে বাবার বাড়ি গেলে তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন পরিবারের লোকজনের চোখে পড়ে। এসময় তারা জিজ্ঞাসাবাদ করলে জান্নাত তার উপর বয়ে যাওয়া নির্যাতনের কথা খুলে বলে। এসময় সে ভয়ে ভয়ে জান্নাত তার বাবাকে বলে- ‘নির্যাতনের কথা বলেছি শুনলে শাহনাজ ম্যাডাম আমাকে প্রাণে মেরে ফেলবেন।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নার্স শাহনাজ আক্তার সাবিহার মুঠোফোনে কল দিলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
কোতোয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ আলী মাহমুদ বলেন- ‘ওই গৃহকর্মীকে নির্যাতনের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। তার শরীরে বেশ কিছু আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। সে হাসাপতালে চিকিৎসাধীন। এ নির্যাতনের ঘটনায় মামলা দায়েরের পর থেকে অভিযুক্তদের খুঁজছে পুলিশ। তারা পলাতক রয়েছেন।’