আলোচিত সিলেট ডেস্ক : জাতীয় পরিবেশ পদক, দুইবার বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পদক প্রাপ্ত, পরিবেশ সমাজ ও কৃষি সংগঠক অধ্যাপক মতিন সৈকত বলেন 'ফায়ার সার্ভিস আগুন নেভাতে পানি পাচ্ছেনা, সেচের পানির অভাবে কৃষি জমি হুমকির মুখে, খাল-নদী জলাভূমি সংরক্ষণ অপরিহার্য। পলিথিন প্লাস্টিকের অত্যাচারে জনজীবন অতিষ্ঠ।'
তিনি আরও ‘চারপাশে প্রাকৃতিক পরিবেশে প্লাস্টিক এর আধিক্য বেড়ে গেছে। যদি এখনি তা রোধ করা না যায় তবে তা ভয়াবহ রুপ ধারণ করবে। তাই আজকের শির্ক্ষাথী তরুণদের এই দ্বায়িত্ব নিতে হবে। ফলদ বনজ ঔষধী গাছ রোপন বাড়াতে হবে।’
সোমবার (৫ জুন) সকাল ১০টায় কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার রায়পুর কে.সি (কৈলাশ চৌধূরী) উচ্চ বিদ্যালয়ে বিশ্ব পরিবেশ দিবসে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি উপরোক্ত কথাগুলো বলেন।
‘প্লাস্টিক দূষণ সমাধানে, সামিল হই সকলে’ প্রতিপাদ্যে বিভিন্ন আয়োজনের মধ্যে দিয়ে সেন্টার ফর কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট এসিসটেন্স (সিসিডিএ)’র সাসটেইনেবল এন্টারপ্রাইজ প্রজেক্ট (এসইপি)’র আয়োজনে বিদ্যালয় প্রাঙ্গন পরিষ্কার, রচনা প্রতিযোগিতা, বৃক্ষের চারা বিতরণ ও রোপন, র্যালি ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
স্থানীয় পরিবেশ ক্লাবের সদস্য ও বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থীবৃন্দ এতে অংশ নেন। র্যালি শেষে স্কুলের সভাকক্ষে সবাই পরিবেশ ও প্রতিবেশ দূষণে প্লাস্টিকে নেতিবাচক ভূমিকা, উষ্ণতা বৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব এর উত্তরণে করনীয় ও পরিবেশ রক্ষার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে এক আলোচনা সভায় মিলিত হয়।
এতে সভাপতিত্ব করেন স্থানীয় বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক মো. মোমেন ভূঁইয়া।
প্রধান অতিথি মতিন সৈকত আরও বলেন, 'মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে লাখো প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশ। হাজার বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্য সমৃদ্ধ নাতিশীতোষ্ণ এ অঞ্চলের জলবায়ু। আমাদের দেশ পৃথিবীর অন্যতম ভূস্বর্গ। নদী মাতৃক বাংলাদেশ। প্রাকৃতিক মাছের অভয়াশ্রম। হাওড়-বাওড়, জলাশয়-জলাভূমি, খাল-বিল, ডোবা-নালা, পুকুর-দিঘী পরিবেষ্টিত সৌন্দর্যের আকর প্রিয় জন্মভূমি। শস্য, শ্যামল, সুজলা, সুফলা বাংলাদেশ। প্রাকৃতিক অভয়ারণ্য, বণ্যপ্রাণী, পাখি-প্রকৃতি,জীববৈচিত্র্যের নৈসর্গিক সৌন্দর্য ভরপুর এ দেশ। গান, কবিতা, গল্প-উপন্যাসে, শিল্পীর কণ্ঠে মহিমান্বিত বাংলাদেশ। বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতি অধিক জনসংখ্যার দেশ। এত সমৃদ্ধির পরেও আমরা আজ দেশি, বিদেশি ষড়যন্ত্রের শিকার। নিজেদের অজ্ঞতা, অ-সচেতনতা, খামখেয়ালিপনা ও যাচ্ছেতাই ব্যবহারের ফলে আজকে আমাদের জন্মভূমি পরিবেশ দূষণে মারাত্মক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে। মাটি, পানি, বায়ু দূষণে বাংলাদেশ চরম ক্ষতিগ্রস্থ।'
তিনি বলেন- 'বাংলাদেশের উজানে ফারাক্কা বাঁধ সহ ৫৪টি অভিন্ন নদীতে ভারত বাঁধ দিয়ে আমাদের স্বাভাবিক পানির ধারা হত্যা করে ফেলছে। সাম্প্রতিক সময়ে জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবে জনজীবন অতিষ্ঠ। ইতিমধ্যে মরুকরণ শুরু হয়ে গেছে। খাল-নদীতে স্বাভাবিক পানি না থাকায় সমুদ্রের লবণাক্ত পানি সারা দেশে ছড়িয়ে পরছে। পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। পানির অভাবে মাছ,জলজ-প্রাণি-জীববৈচিত্র ফসলের মাঠে হাহাকার লেগে গেছে। নগরায়নের অশুভ প্রতিযোগিতা, রাস্তা, আবাসন, কলকারখানা, বিভিন্ন স্হাপনার প্রয়োজনে জলাভূমি বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ফায়ার সার্ভিস আগুন নেভাতে পানি পাচ্ছেনা। সেচের পানির অভাবে কৃষি জমি হুমকির মুখে। এমতাবস্থায় দেশের খাল-নদী জলাশয় সংরক্ষণে সকলের সম্মিলিত ঐক্যবদ্ধ সহযোগিতা অনিবার্য। দেশব্যাপী কাজ করার জন্য জাতীয়ভাবে একটি সংগঠন প্রয়োজন। খাল-নদী-জলাভূমি সংরক্ষণ জাতীয় কমিটি।'
এতে বিজ্ঞানী, গবেষক, সাংবাদিক, শিক্ষক, সুশীল সমাজ, রাজনীতিক, প্রশাসক, রাষ্ট্র এবং সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্ষদ, পরিবেশবাদীদের পাশাপাশি সকল পেশার স্বেচ্ছাসেবী এবং জনগণের সহযোগিতা প্রয়োজন। দেশপ্রেম, মেধা, শ্রম,অর্থ ব্যায় করে দেশের জন্য কাজ করতে সরকার ও রাষ্ট্রকে খাল-নদী জলাভূমি সংরক্ষণে সহযোগিতা করতে আগ্রহীদেরকে আমন্ত্রণ।'
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন এসইপি প্রকল্প ব্যবস্থাপক মো. মাসুদ আলম, লোকমান হোসেন আকন্দ, জায়দুল ইসলাম।
উপস্থিত ছিলেন সহ. প্রধান শিক্ষক মো. মাজেদুল হক, সহ. শিক্ষক বুলবুল আহম্মেদ, পরিবেশ কর্মকর্তা মো. সাহেদুল ইসলাম, ডকুমেন্টেশন কর্মকর্তা মো. নূরুন্নবী রাসেল ও ইমরান শেখ সহ সিসিডিএর কর্মকর্তা ও বিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট শিক্ষক বৃন্দ।
স্কুল প্রাঙ্গণে শির্ক্ষাীদের নিয়ে নিম ও অর্জুনের চারা রোপণ করা হয়। এছাড়া দিবসটি উপলক্ষে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে ‘পরিবেশ সংরক্ষণ ও দূষণ নিয়ন্ত্রন’ বিষয়ে রচনা প্রতিযোগিতা ও পুরষ্কার বিতরণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিযোগিতায় মাধ্যমিক পর্যাযের ৩০ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয়।